সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের গুরুত্ব আধুনিক সমাজে দিন দিন বেড়েই চলেছে। তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে সামাজিক মাধ্যমের মাধ্যমে মানুষ একে অপরের সাথে সহজেই সংযুক্ত থাকতে পারে এবং বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন বিষয়ে অবগত হতে পারে। ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম, লিংকডইন এবং ইউটিউবের মতো প্ল্যাটফর্মগুলো প্রতিদিনের জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
সামাজিক মাধ্যমের ইতিবাচক দিকসমূহ
১. বিশ্বব্যাপী যোগাযোগের সেতুবন্ধন
এক সময় মানুষ দূর-দূরান্তে যোগাযোগ করতে চিঠি বা টেলিফোনের উপর নির্ভর করত। আজকের দিনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের মাধ্যমে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে বিশ্বের যেকোনো প্রান্তের মানুষদের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব। এর ফলে সামাজিক, ব্যক্তিগত, ও পেশাগত ক্ষেত্রেও ব্যাপকভাবে সম্পর্ক বজায় রাখা সহজ হয়েছে।
২. ব্যবসা ও ই-কমার্সের প্রসার
সামাজিক মাধ্যমের মাধ্যমেই ই-কমার্স বা অনলাইন ব্যবসার প্রসার ঘটেছে। ব্যবসায়ীরা তাঁদের পণ্য বা সেবার প্রচারণার জন্য সামাজিক মাধ্যমকে ব্যবহার করছেন। বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে তাদের পণ্য বা সেবা সরাসরি ক্রেতার কাছে পৌঁছে যাচ্ছে। ফলে ছোট বা বড়, সব ধরনের ব্যবসায়ীরা সামাজিক মাধ্যমে নিজের পণ্য বিক্রি করে সফলতা অর্জন করছেন।
৩. শিক্ষায় সহায়ক ভূমিকা
শিক্ষার্থীদের জন্য সামাজিক মাধ্যম একটি মূল্যবান মাধ্যম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বিভিন্ন অনলাইন ক্লাস, শিক্ষামূলক ভিডিও, ওয়েবিনার এবং বিভিন্ন শিক্ষাসংক্রান্ত পোষ্ট শিক্ষার্থীদের পাঠ্যপুস্তকের বাইরেও অনেক নতুন কিছু শেখার সুযোগ করে দিচ্ছে। একে কেন্দ্র করে তৈরি হয়েছে বিভিন্ন স্টাডি গ্রুপ, যা শিক্ষার্থীদের একে অপরের সাথে আলোচনা করে শিখতে সহায়তা করছে।
৪. তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য প্ল্যাটফর্ম
করোনার সময় থেকে অনেক তরুণ সামাজিক মাধ্যমকে ব্যবহার করে নিজেদের ব্যবসার প্রসার ঘটাচ্ছে। নতুন ব্যবসা শুরু করার জন্য, পণ্য প্রচার, এবং ক্রেতার সাথে সরাসরি যোগাযোগ করার জন্য এটি একটি আদর্শ প্ল্যাটফর্ম। ফলে শুধুমাত্র চাকরির ওপর নির্ভর না করে তরুণেরা নতুন উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করার সুযোগ পাচ্ছে।
সামাজিক মাধ্যমের নেতিবাচক দিকসমূহ ও সতর্কতা
যদিও সামাজিক মাধ্যম অনেক ইতিবাচক সুযোগ এনে দিয়েছে, তবুও এর কিছু নেতিবাচক দিক রয়েছে।
১. গুজব ও ভ্রান্ত তথ্য
সামাজিক মাধ্যমে যে কোনো বিষয়ে অবাধে মতামত দেওয়া সম্ভব, কিন্তু এর মাধ্যমে অনেক সময় ভুল তথ্য বা গুজব ছড়িয়ে পড়ে। এটি ব্যক্তিগত এবং সামাজিক জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। তাই কোন তথ্য শেয়ার করার আগে নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে যাচাই করা উচিত।
২. ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তা
সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারের মাধ্যমে ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্যও ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারে। বিভিন্ন হ্যাকিং বা ফিশিং আক্রমণ থেকে ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষিত রাখতে সতর্ক থাকা প্রয়োজন এবং প্ল্যাটফর্মগুলোর প্রাইভেসি সেটিংস সঠিকভাবে ব্যবহার করতে হবে।
৩. সময়ের অপচয়
অতিরিক্ত সময় সামাজিক মাধ্যমে ব্যয় করার ফলে পড়াশোনা বা পেশাগত কাজে ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে। তাই, সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারের ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করা এবং তা মেনে চলা উচিত।
সঠিক ব্যবহারের উপায়
সামাজিক মাধ্যমের সুবিধা উপভোগ করতে হলে এর ব্যবহারে সতর্কতা অবলম্বন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
- নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করা: প্রতিদিন সামাজিক মাধ্যমে কত সময় ব্যয় করা হবে তা আগে থেকেই নির্ধারণ করলে অপ্রয়োজনীয় সময় নষ্ট হবে না।
- উদ্ভাবনী ব্যবহার: শুধু বিনোদনের জন্য নয়, বরং শিক্ষামূলক এবং পেশাগত উন্নতির জন্যও সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করা উচিত।
- গঠনমূলক মন্তব্য ও পোস্ট: কোন তথ্য বা পোস্ট শেয়ার করার আগে তার সত্যতা যাচাই করা এবং গঠনমূলক মন্তব্য করা, যাতে অন্যরাও ইতিবাচক বার্তা পায়।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম আধুনিক জীবনে অপরিহার্য হলেও, এর অপব্যবহার আমাদের সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। সঠিকভাবে এবং সুশৃঙ্খল পদ্ধতিতে এর ব্যবহার আমাদের ব্যক্তি ও সমাজ উভয়ের জন্যই উপকারী হবে।