অনলাইন নিরাপত্তা ও প্রাইভেসি

ডিজিটাল নিরাপত্তা কেন প্রয়োজন

ডিজিটাল বাংলাদেশের পথ চলার সাথে সাথে ডিজিটাল হচ্ছে সব কিছু। দেখা যায় নিজের ইমেইল, সোশ্যাল মিডিয়া একাউন্ট, গুরুত্বপূর্ণ ফাইল ওপেন করেই অনেকে বাহিরে চলে যায়, অপরিচিত ব্যক্তির দেয়া লোভনীয় অফারে লিংকে ক্লিক করছেন, অনলাইন শপিং করার জন্য যাচাই বাছাই না করেই দিয়ে দিচ্ছেন ক্রেডিট কার্ড বা ব্যাংক একাউন্টের সকল তথ্য। এমন উদাসিনতায় নিজে বিপদে পড়ছেন এবং প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য চলে যায় অন্যের হাতে। এজন্যই ডিজিটাল নিরাপত্তা সম্পর্কে জানা জরুরি।

গুজব, ভুয়া খবর বা ফেক নিউজ

সোশ্যাল মিডিয়ার এই যুগে উদ্বেগজনক কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে গুজব, ভুয়া খবর বা ফেক নিউজ ছড়িয়ে পড়ার বিষয়টি। যেকোনো আলোচিত ঘটনাকে কেন্দ্র করে বস্তুনিষ্ঠ খবরের মাঝে দুই একটা ভুয়া খবর ভাইরাল হওয়া এখন আর নতুন কিছু নয়। গুজব – ভুয়া খবর ছড়ানোর প্রবণতা এখন এতোটাই বেড়ে গেছে যে আমাদের বিশ্বাসের জায়গাটা হারিয়ে যাচ্ছে। কোন প্রকার যাচাই বাছাই না করেই আমরা আবেগ-তাড়িত খবরের দিকে আকৃষ্ট হচ্ছি। গুজবের কারনে কেউ সামাজিকভাবে আবার কেউ আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ভুয়া খবর প্রতিরোধে সামাজিক গণমাধ্যম ব্যবহারে সকলের সচেতনতা এবং দায়িত্বশীল আচরণের কোনো বিকল্প নেই।

ভুয়া খবর যে ভাবে ছড়ায় এবং সনাক্ত করনের উপায়ঃ

ভুয়া খবর কি ভাবে ছড়ায় ?

মূলত চারটি উপায়ে ভুয়া খবর ছড়িয়ে থাকে, 

১। ফেসবুক

২।ইউটিউব 

৩। ভুয়া ওয়েবসাইট 

৪। গণমাধ্যম 

সাধারণত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত  উত্তেজনাপূর্ণ বা উস্কানিমূলক স্ট্যাটাস বা ছবি বা ভিডিওগুলো ইউজারদের লাইক, কমেন্ট ও শেয়ারের কারণে রাতারাতি ভাইরাল হয়ে যায় । আবার অনেক গণমাধ্যম দ্রুত ভিউয়ার বাড়াতে এসব সামাজিক মাধ্যমের তথ্য যাচাই বাছাই না করেই খবর প্রকাশ করে ।

এরপর ঐ গণমাধ্যমের খবরের সূত্রধরে অল্প সময়ের মধ্যেই চক্রবৃদ্ধিহারে সর্বসাধারণের মধ্যে ভুয়া খবরটি ছড়িয়ে পরে । 

ভুয়া খবর সনাক্ত করনের উপায়ঃ

  • খবরের তথ্য নিয়ে সন্দেহ হলে, প্রতিটি যাচাই করুন
  • অনলাইনে সার্চ দিয়ে যাচাই বাছাই করে দেখে নিতে হবে
  • খবরের তথ্যসূত্র বা ছবি/ভিডিওর উৎস বের করতে হবে
  • মূলধারার বিশ্বাসযোগ্য গণমাধ্যম পড়তে হবে
  • খবরের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে সরাসরি কথা বলা যেতে পারে
  • ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলের জন্য অতিরঞ্জিত , পক্ষপাতমূলক এবং ভ্রান্ত তথ্যবহুল সংবাদ প্রচার
  • রাতারাতি জনসমর্থন অর্জন, সাম্প্রদায়িক উস্কানি ছড়ানো, সামাজিক অস্থিতিশীলতা এবং অর্থনৈতিক লাভের জন্য গুজব বা ফেক নিউজ ছড়ানো হয়।
  • গুজব ভুয়া ওয়েবসাইট , ফেসবুক, ইউটিউভের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে
  • মন্তব্য বা শেয়ার করার ক্ষেত্রে সত্যতা সম্পর্কে নিশ্চিত হতে হবে

সাইবার ক্রাইম সংক্রান্ত অপরাধঃ

সাইবার ক্রাইম একটি মারাত্মক অপরাধ । এতে অপরাধ কারির জেল কিংবা বড় অঙ্কের জরিমানাও হতে পারে । বিশ্বের অন্যান্য দেশের সাথে তাল মিলেয়ে বাংলাদেশও ডিজিটালাইজেশন হচ্ছে । ডিজিটাল হওয়ার পাশাপাশি সাইবার ক্রাইম সংক্রান্ত অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে এবং এর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে । সাইবার অপরাধীরা  অনলাইন একাউন্ট, ইমেইল, ওয়েবসাইট হ্যাকিং এর মাধ্যমে প্রতারণা, ক্রেডিট কার্ড- ব্যাংক একাউন্টের তথ্য চুরি, ব্ল্যাকমেইল, পর্ণোগ্রাফি, হয়রানি,  হুমকি, সামাজিক উস্কানিসহ নানা সমস্যার সৃষ্টি করছে। এর একমাত্র মূল কারন জনসচেতনতার অভাব । আমাদের উচিৎ সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারে জনসচেতনতা বৃদ্ধি  করা । 

উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, সাইবার অপরাধীরা সামাজিক মাধ্যম থেকে অনেক সময় চাকরিজীবীদের কোম্পানি সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে থাকে।

সাইবার সিকিউরিটি বিশেষজ্ঞ রিচার্ড হর্ন বলেন, “অনেক মানুষ নিজেদের সম্পর্কে সামাজিক মাধ্যমে অনেক তথ্য লিখে দেন। সুতরাং হামলাকারীরা কারো একজনের প্রোফাইল দেখে তাদের সম্পর্কে ধারণা পায় এবং সেভাবে হয়তো তাদের কাছে প্রতারণা মূলক বা ফাঁদে ফেলার জন্য মেইল পাঠিয়ে দেয়।”

 

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮-এর খসড়ায় চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ। নতুন আইনের ১৭ থেকে ৩৮ ধারায় বিভিন্ন অপরাধ ও শাস্তির বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। নিজেকে নিরাপদ রাখতে অবশ্যই আমাদের নির্দেশিত আইন গুলো মেনে চলতে হবে।

বাংলাদেশের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কি রয়েছে?

ডিজিটাল মাধ্যমে প্রকাশিত বা প্রচারিত কোনো তথ্য-উপাত্ত দেশের সংহতি, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড, নিরাপত্তা, প্রতিরক্ষা, ধর্মীয় মূল্যবোধ বা জন শৃঙ্খলা ক্ষুণ্ণ করলে বা জাতিগত বিদ্বেষ ও ঘৃণা সৃষ্টি করলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়ার বিধান রয়েছে।

আইন অনুযায়ী ডিজিটাল মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধ বা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বা জাতির পিতার নামে প্রোপাগান্ডা বা প্রচারণা চালালে বা মদদ দিলে অনধিক ১০ বছরের কারাদণ্ড বা এক কোটি টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ড হতে পারে।

ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে আক্রমণাত্মক, মিথ্যা, ভীতি প্রদর্শক তথ্য-উপাত্ত প্রকাশ, মানহানিকর তথ্য প্রকাশ, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত, আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটানো, ঘৃণা প্রকাশ, অনুমতি ছাড়া ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ, প্রকাশ বা ব্যবহার করলে জেল জরিমানার বিধান রয়েছে। 

ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে প্রতারণা করলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়ার বিধান রয়েছে। কম্পিউটার হ্যাকিংয়ের বিষয়েও বিধান রয়েছে এই আইনে। 

ছবি বিকৃতি বা অসৎ উদ্দেশ্যে ইচ্ছেকৃতভাবে বা অজ্ঞাতসারে কারো ব্যক্তিগত ছবি তোলা, প্রকাশ করা বা বিকৃত করা বা ধারণ করার মতো অপরাধ । ইন্টারনেটে পর্নগ্রাফি ও শিশু পর্নগ্রাফির জন্য আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়ার বিধান রয়েছে।

বাংলাদেশ বা বিশ্বের যেকোনো জায়গায় বসে বাংলাদেশের কোন নাগরিক যদি এই আইন লঙ্ঘন করেন, তাহলেই তার বিরুদ্ধে এই আইনে বিচার করা যাবে।

আইন:- 

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (সংশোধন) আইন, ২০১৩

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (সংশোধন) আইন, ২০০৯

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন, ২০০৬

পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১২

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *